সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:৩৫ পূর্বাহ্ন
সাভারে জরিমানার টাকা দিতে না পেয়ে নাজমুল কাজী (৩০) নামে এক রিকশাচালক আত্মহত্যা করেছেন। মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) দিনগত রাত ১০টারদিকে পৌর এলাকার রেডিওকলোনীর জালেশ্বর মহল্লায় ভাড়া বাসা থেকে ওই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তবে থানা পুলিশের দাবি, ওই যুবকের রিকশা হাইওয়ে থানা পুলিশ নেয়নি। সেটি চুরি হতে পারে। তাছাড়া তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন। তার রিকশাটি হারিয়ে যাওয়ায় তিনি হয়তো উত্তেজিত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের ধারণা।
মৃত নাজমুল খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সবুর কাজীর ছেলে। স্থানীয়রা জানান, এর আগেও একবার নজমুলের রিকশা হাইওয়ে পুলিশ ধরে তিন হাজার টাকা জরিমানা করেছিল।
প্রতিবেশী মো. শাহীন বলেন, ‘ছেলেটা গরিব, রিকশা চালিয়ে খায়। আগেও একবার ওর রিকশা পুলিশ ধরে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করছিল। এখনও শুনেছি পুলিশ ধরেছে। কিন্তু জরিমানার টাকা দিতে না পারায় পুলিশ রিকশাটা থানায় নিয়ে গেছে। হাইওয়ে পুলিশে খবর নিলে তারা থানায় রিকশা নেয়নি বলে জানিয়েছে। কিন্তু নাজমুল বলেছে, পুলিশ থানায় নিয়েছে। ৩ হাজার টাকা লাগবে রিকশা ছাড়িয়ে আনতে। এই টাকা ম্যানেজ করতে না পেরেই নাজমুল আত্মহত্যা করেছে।
নাজমুলের স্ত্রী নাজমা বলেন, ওর রিকশা নাকি রেডিও কলোনি থেকে পুলিশে ধরেছে। শ্বশুরের কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা নিয়ে গ্যারেজ মালিকের কাছে গেছি। উনি বলেছেন, পুলিশ ধরলে নাজমুলকে ছাড়া রিকশা দেবে না। এ কারণে আবার বাসায় ওকে নিতে এসে দেখি ঘরের ছিটকিনি আটকানো। ঘরের ফাঁক দিয়ে দেখি ও আত্মহত্যা করেছে। টাকা জোগাড় করতে না পেরেই চিন্তায় আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে।
আশুলিয়া থানা রিকশা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যানচালকদের ওপর সাভারে অত্যাচারের শেষ নেই। কখনও দুর্বৃত্তরা যাত্রীবেশে অসহায় চালককে হত্যা অথবা জখম করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এর ওপর আবার রাস্তায় বের হলেই হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি। র্যাকার বিলের নামে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। যারা দিতে পারে না তাদের রিকশা হাইওয়ে থানায় নিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে। আবার অনেক সময় দালালরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে রাতের আঁধারে রিকশা হাইওয়ে থানা থেকে বের করে বিক্রি করছে কিংবা মালিককে দিচ্ছে। আমরা অসহায় দেখেই সর্বক্ষণ এমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছি।’
সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হক বলেন, খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করেছি। ফ্যানের সঙ্গে একটি কাপড় প্যাঁচিয়ে রশির মতো বানিয়ে সেটিতে ফাঁস লাগিয়ে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এর আগেও তিনি বিষ খেয়েছিলেন। উত্তেজিত হয়ে তিনি হয়তো এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। তার রিকশা হয়তো চোরে নিয়েছে। কারণ হাইওয়ে পুলিশ রিকশা নেয়নি বলে জেনেছি। কিন্তু তিনি বাসায় এসে বলেছেন পুলিশ নিয়েছে রিকশা। পরে তার বউ বলেছে, চলো পুলিশের কাছে যাই, কিন্তু তিনি যাননি।
তিনি আরও জানান,এ ঘটনায় তার স্ত্রী একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাতেই রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
সাভার হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার রেডিও কলোনি থেকে এমন কোনো রিকশা আটক করিনি। আর রিকশার জরিমানা ৩০০০ হাজার না, ২৪০০ টাকা। সেটি থানায় না, ইউক্যাশ থেকে দিতে হয়।’